আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসির সেরা ১০ মুহূর্ত
শেষটা হয়তো এখন কাছেই। ২০২৬ বিশ্বকাপ হতে পারে লিওনেল মেসির জাতীয় দলের জার্সিতে শেষ আসর। যদিও ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর অবসরের গুঞ্জন উঠেছিল, কিন্তু লিওনেল স্কালোনির অধীনে ফুটবলটা উপভোগ করতে করতে মেসি আরও কিছুটা সময় উপহার দিলেন ফুটবল বিশ্বকে।
চলুন ফিরে দেখা যাক মেসির আর্জেন্টিনা জার্সিতে খেলা সেরা ১০টি স্মরণীয় মুহূর্ত—
১০. স্বপ্নের অভিষেক – ২০০৬ বিশ্বকাপ
বার্সেলোনায় দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েও চোটে পড়েছিলেন তরুণ মেসি। তবু জায়গা হয় জার্মানির বিশ্বকাপে। সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে মাত্র ১৬ মিনিটে করলেন ১ গোল, বানালেন আরেকটি। গ্যালারিতে বসে আনন্দে ঝলমল করছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার চোখ।
৯. দুর্দান্ত গ্রুপ পর্ব – ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪
২০১৪ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রত্যাশার ভার ছিল মেসির কাঁধে। গ্রুপ পর্বে বসনিয়া, ইরান আর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে করলেন চার গোল। বিশেষ করে ইরানের বিপক্ষে যোগ হওয়া সময়ে করা তাঁর শটটি আজও আলোচিত। যদিও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়।
৮. হাজারতম ম্যাচে জাদু – অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে
২০২২ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলো ম্যাচটি ছিল মেসির ক্যারিয়ারের ১০০০তম। সেদিনও গোল করে প্রমাণ করলেন, তিনি এখনও সর্বকালের সেরা। প্রতিপক্ষ মিডফিল্ডার কিয়ানু ব্যাকাস বলেছিলেন, “মনে হচ্ছিল যেন মোমের মূর্তি নড়ছে।”
৭. ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক – ২০১২ প্রীতি ম্যাচ
সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল। সেই দলকেই হারালেন একা হাতে। নিউ জার্সিতে প্রীতি ম্যাচে মেসির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনা জিতেছিল ৪–৩ ব্যবধানে। শেষ গোলটি ছিল শিল্পীর ক্যানভাসের মতো সৌন্দর্যময়।
৬. গাভারদিওলকে নাচানো – ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে
কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মেসির পায়ে ছিল জাদুর ছোঁয়া। তরুণ ডিফেন্ডার গাভারদিওলকে একেবারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাস বানালেন হুলিয়ান আলভারেজের জন্য। সেই গোলই আর্জেন্টিনাকে পৌঁছে দেয় ফাইনালে।
৫. লুসাইলের যুদ্ধ – নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে
২০২২ সালের উত্তপ্ত কোয়ার্টার ফাইনাল। মেসির অবিশ্বাস্য পাসে মলিনার গোল ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু ভক্তদের মনে গেঁথে আছে মেসির রাগে ফেটে পড়া সাক্ষাৎকার: “কী দেখছিস, বোকা? গর্দভ!”—সেই মুহূর্তেই আর্জেন্টাইনরা দেখল মেসির ভেতরের আগুন।
৪. সৌদি ধাক্কার পর নতুন ভোর – ২০২২ বিশ্বকাপ
সৌদি আরবের কাছে হার আর্জেন্টিনাকে ফেলে দিয়েছিল বিপদে। পরের ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে ২৫ গজ দূর থেকে গোল করে মেসি ফিরিয়ে আনলেন আশার আলো। ম্যাচ শেষে তিনি বলেছিলেন, “আজ থেকেই আমাদের নতুন বিশ্বকাপ শুরু।”
৩. ঈশ্বরের উপহার – ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক
২০১৬ সালে অবসর নিয়েছিলেন, কিন্তু ফেরার পরই দিলেন অমূল্য উপহার। ২০১৭ সালে ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে একাই করলেন হ্যাটট্রিক। সেই জয়েই রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা পায় আর্জেন্টিনা। পুরো দেশ একসুরে বলেছিল: “ধন্যবাদ, মেসি!”
২. চোখের জলে প্রথম ট্রফি – কোপা আমেরিকা ২০২১
ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে খুব একটা উজ্জ্বল ছিলেন না। কিন্তু আগের ম্যাচগুলোতে ছিলেন দুর্দান্ত। রিও দে জেনিরোর মাঠে আর্জেন্টিনা ১–০ গোলে জয় পাওয়ার পর মেসির চোখের অশ্রু সাক্ষী হলো ২৮ বছরের অপেক্ষা ঘোচানোর। এটাই ছিল তাঁর প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ট্রফি।
১. ক্যারিয়ারের রাজমুকুট – বিশ্বকাপ ২০২২
কাতারের ফাইনাল—ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় ম্যাচ। ফ্রান্সের বিপক্ষে ৩–৩ গোলে সমতা, এরপর টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার জয়। মেসি জিতলেন ক্যারিয়ারের কাঙ্ক্ষিত ট্রফি। গোল্ডেন বল পেলেন দ্বিতীয়বারের মতো, গড়লেন অসংখ্য রেকর্ড। গ্যারি লিনেকার লিখেছিলেন, “মেসি ফুটবলের জন্য ঈশ্বরের উপহার।”
এই ছিল আর্জেন্টিনার জার্সিতে লিওনেল মেসির সেরা ১০ মুহূর্ত। প্রতিটি মুহূর্তই যেন নতুন এক কিংবদন্তির জন্ম দিয়েছে। আর এখন গোটা বিশ্ব অপেক্ষায়—২০২৬ বিশ্বকাপে শেষবারের মতো কি দেখা যাবে মেসির জাদু?