ইতিহাস রচনা করলেন গুকেশ! ম্যাগনাস কার্লসেনকে হারিয়ে চমক
যা কেউ ভাবেনি, সেটাই করে দেখালেন ডি গুকেশ। জীবনে প্রথমবারের মতো ক্লাসিক্যাল দাবায় হারালেন বিশ্বসেরা দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনকে, তাও আবার তাঁরই ঘরের মাঠে—নরওয়ে ওপেনের ষষ্ঠ রাউন্ডে।
ম্যাচের বেশির ভাগ সময় পিছিয়ে থাকা গুকেশ শেষ পর্যন্ত অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে ইতিহাস গড়লেন। প্রতিপক্ষ ছিলেন বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু, অথচ শেষ হাসি হাসলেন ভারতের তরুণ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। এই হারের ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি কার্লসেন—খেলার শেষে রেগে টেবিলে ঘুষি মারেন তিনি!
সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলছিলেন গুকেশ। অন্য দিকে কার্লসেন ছিলেন কালো ঘুঁটির খেলোয়াড়। খেলার শুরু থেকেই কার্লসেন দাপট দেখাতে শুরু করেন। অভিজ্ঞতা ও গেম কন্ট্রোল—দুটিই ছিল তাঁর পক্ষে। ৩৪ বছরের এই নরওয়েজিয়ান দাবাড়ু যখন ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন অনেকেই ধরেই নিয়েছিলেন, এটা আবারও গুকেশের পরাজয়ের গল্প হতে চলেছে। তবে গুকেশ ছিলেন অন্যরকম মুডে। খেলা শেষে তিনি জানান, “একটা সময় মনে হচ্ছিল খেলা ছেড়ে দেব। কিন্তু লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সেখান থেকেই ম্যাচটা বদলে যেতে থাকে।”
গুকেশের রক্ষণ ছিল অসাধারণ। বেশির ভাগ সময় তাঁকে দেখা গিয়েছে নিজের ঘর সামলাতে। তাঁর হাতে সময়ও ছিল কম। কিন্তু ৪০তম চাল পার হতেই ম্যাচের গতি বদলাতে থাকে।
৪৪তম চালে একটা বড় ভুল করে বসেন কার্লসেন, যেটা গুকেশ নিখুঁতভাবে কাজে লাগান। ধীরে ধীরে কার্লসেনের সময়ও কমে আসে, তাঁকেও তাড়াহুড়ো করতে হয়। আর সেই চাপে গড়িয়েই এন্ডগেমে হার মানেন বিশ্বের এক নম্বর দাবাড়ু।
খেলা শেষ হতেই হতাশায় ফেটে পড়েন কার্লসেন। টেবিলে জোরে ঘুষি মারেন, তাতে দাবার দু-একটি ঘুঁটি নিচে পড়ে যায়। তবে পরে নিজের রাগ সামলে নিয়ে গুকেশের কাছে ক্ষমা চান তিনি।
অন্য দিকে গুকেশ তখনো যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না যে তিনি জিতেছেন! চেয়ার ছেড়ে উঠে মুখে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেন, তারপর ধীরে ধীরে নিজের স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বোর্ড গুছিয়ে ফেলেন।
বিশ্বখ্যাত দাবাড়ু সুজান পোলগার এই ম্যাচ নিয়ে বলেন, “কার্লসেনকে ক্লাসিক্যাল দাবায় হারানো প্রায় অসম্ভব। ও খুব কমই ভুল করে। কিন্তু গুকেশ ওকে চাপে ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত ভুল করেই ফেলল কার্লসেন। আমি নিশ্চিত, ও নিজের উপর প্রচণ্ড রেগে আছে। এটা ওর কেরিয়ারের সবচেয়ে খারাপ হার।”
এই জয় শুধু ডি গুকেশের ব্যক্তিগত অর্জন নয়, ভারতীয় দাবা ইতিহাসের এক মাইলফলক। বিশ্ব দাবায় ভারতের আধিপত্যের আরেকটি স্পষ্ট চিহ্ন দিয়ে গেল এই ম্যাচ। গুকেশ যেন বুঝিয়ে দিলেন—কার্লসেন যুগ শেষের দিকে, আর সামনে এগিয়ে আসছে ভারতের নতুন দাবা যুগ!