চেলসির অবিশ্বাস্য জয়: ক্লাব বিশ্বকাপ ফাইনালে পিএসজিকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত
নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ৮১ হাজার দর্শকের সামনে ঘটে গেল এক চমকপ্রদ কাহিনি। ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫-এর ফাইনালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজির বিরুদ্ধে চেলসির ৩-০ গোলের জয় যেন রূপকথাকেও হার মানায়। ম্যাচের প্রথমার্ধেই তিন গোল করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে লন্ডনের ক্লাবটি।
সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের জালে ৩ গোল দেওয়া পিএসজিই ফাইনালে এসে যেন চেলসির কাছে একই ওষুধ খেয়ে বসে। প্রথমার্ধের পর মাঠে পারফর্ম করেন দোজা ক্যাট ও জে বালভিন, কিন্তু স্টেডিয়ামে তখনো দর্শকদের চোখে ভাসছিল কোল পালমারের জোড়া গোল।
ম্যাচের নায়ক: কোল পালমার
২২ ও ৩০ মিনিটে পরপর দুই গোল করে প্রথমার্ধেই ম্যাচের গতি নির্ধারণ করে দেন চেলসির মিডফিল্ডার পালমার। দুইবারই বল এসেছিল ডান প্রান্ত থেকে—প্রথমটিতে রাইট ব্যাক মালো গুস্তোর থেকে, দ্বিতীয়টিতে ডিফেন্ডার লেভি কোলউইলের কাছ থেকে। দুইবারই বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে পরাস্ত করেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক দোন্নারুম্মাকে।
৩৮ মিনিটে চেলসির হয়ে তৃতীয় গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার হোয়াও পেদ্রো। পালমারের ডিফেন্স চেরা পাস ধরে দোন্নারুম্মার মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়ান তিনি।
পিএসজির হতাশা, উত্তেজনা এবং লাল কার্ড
পিএসজি ম্যাচে সুযোগ তৈরি করলেও চেলসি গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজ ৬টি দুর্দান্ত সেভ করে তাঁদের বঞ্চিত করেন। দ্বিতীয়ার্ধে ওসমান দেম্বেলে ও খিচা কাভারাস্কাইয়ার শটও আটকান তিনি।
৮৫ মিনিটে ম্যাচে উত্তেজনার চূড়ান্ত মুহূর্ত আসে, যখন চেলসির ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেল্লার চুল টেনে ফেলেন পিএসজির মিডফিল্ডার হোয়াও নেভেস। ভিএআরের মাধ্যমে লাল কার্ড দেখেন নেভেস। এরপর মাঠে এবং ম্যাচ শেষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে ও দোন্নারুম্মাকে চেলসির খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
‘পারফেক্ট’ মৌসুমের স্বপ্নভঙ্গ পিএসজির
চ্যাম্পিয়নস লিগ, লিগ ওয়ান ও ফ্রেঞ্চ কাপ জয় করেও ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে মৌসুমের এক নিখুঁত সমাপ্তি ঘটাতে পারল না প্যারিস সেন্ট জার্মেই। ২০১১ সালে কাতারি মালিকানায় যাওয়ার পর এটি তৃতীয়বার, যখন প্রথমার্ধেই ৩ গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা।
পালমারের মৌসুমের ক্লাইম্যাক্স
মে মাসে কনফারেন্স লিগ ফাইনালেও দুটি গোল করান পালমার, এবার বিশ্ব মঞ্চে চেলসিকে এনে দিলেন নতুন উচ্চতা। পুরো মৌসুমে ৫২ ম্যাচে ১৮ গোল ও ১৪টি অ্যাসিস্ট করা এই মিডফিল্ডার ম্যাচ শেষে বলেন, ‘ম্যাচের আগে অনেকে আমাদের নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিল। আমরা জানতাম কী করতে হবে। দারুণ লাগছে।’
চেলসি কোচ এনজো মারেসকাও প্রশংসা পান পালমারের মুখে—‘তিনি জানতেন কোথায় জায়গা তৈরি হবে। আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছেন, আর আমি কাজটা করেছি।’ চেলসি এখন শুধু ক্লাব বিশ্বকাপের ট্রফি নয়, নিজেদের গর্বের ইতিহাসে যোগ করল এক নতুন অধ্যায়—যেখানে ফেভারিট নয়, বরং সাহসিকতাই ম্যাচের রূপ বদলে দেয়।