ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট ড্র হল, তবে এই ড্র ছিল ভারতের ‘নৈতিক জয়’। শেষ দিনের খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই ড্র মেনে নিল ইংল্যান্ড, যখন ভারতের স্কোর ছিল ৩৮৬/৪, ইনিংসের বয়স ১৩৮ ওভার। ক্রিজে তখন রবীন্দ্র জাডেজা (৮৯*) ও ওয়াশিংটন সুন্দর (৮০*)। ম্যাচ বাঁচানো নয়, ভারত তখন জয়ের স্বপ্নও দেখছিল।
ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস ড্র’র প্রস্তাব দিলেও ভারতের দুই ব্যাটার তা প্রত্যাখ্যান করেন। এই তিন মিনিটের ঘটনা ম্যাচের মনস্তত্ত্বই বদলে দেয়। আগেভাগে হাল না ছেড়ে ভারত প্রমাণ করে, হারার আগে হার মানা নয়। ম্যাচ ড্র হলেও ভারতের আত্মবিশ্বাসের জয় স্পষ্ট। ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীও বলে দেন, “এটা ভারতের মোরাল ভিক্টরি।”
এই লড়াইয়ের নায়ক শুভমন গিল, রবীন্দ্র জাডেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। শুভমনের লড়াকু শতরান, জাডেজার পরিণত ব্যাটিং এবং ওয়াশিংটনের মাটিতে পা রাখা ইনিংস ভারতের ড্র’র ভিত্তি গড়ে দেয়।
চতুর্থ দিন থেকেই ম্যাচ রক্ষা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন গিল ও রাহুল। পঞ্চম দিনে মাঠে নামতেই বেন স্টোকস প্রমাণ করেন কেন তিনি ইংল্যান্ডের মূল অস্ত্র। তাঁর বলেই রাহুল এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন। এরপরই নামেন ওয়াশিংটন সুন্দর— যাঁকে নিয়ে শুভমন হয়তো ভাবেন না, তবে তিনি আবারও প্রমাণ করেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব।
ওয়াশিংটনের মতো একজন স্পিনার, যিনি আগের ইনিংসে দু’টি উইকেট নিয়েছিলেন, তাঁকেই ম্যাচে বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ ব্যাট হাতে কোনও ভুল করেননি সুন্দর। তাঁর ইনিংস ছিল ধৈর্য, সংযম আর প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।
জাডেজাও ঠিক তেমন। প্রথম বলেই ক্যাচ তুললেও ভাগ্য ভালো ছিল, রুট তা ফস্কে দেন। এরপর ব্যাট হাতে শতরান করে নিজের অভিজ্ঞতার মূল্য চোকান। বাঁহাতি জুটি ভারতের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী ছিল, কারণ ইংল্যান্ডের সব পেসারই ছিলেন ডানহাতি।
স্পিনার লিয়াম ডসন বাঁহাতি হলেও তাঁকে ব্যবহার করতে পারলেন না স্টোকস। রাফ ব্যবহার করতে বলেও কোনও লাভ হয়নি। আর এখানেই ভারত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে।
এই সিরিজে শুভমনের অধিনায়কত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও ব্যাট হাতে তিনি একের পর এক রেকর্ড ছুঁয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ২৫ বছর বয়সেই ডন ব্র্যাডম্যান, গ্যারি সোবার্সদের পাশে নিজের নাম তুলেছেন। নেতৃত্বের চাপও ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলেনি তাঁর।
শেষে স্টোকসের কথা বলতেই হয়। শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও তিনি বল হাতে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাহুলের উইকেট নেওয়া তাঁর প্রতিজ্ঞারই প্রমাণ। তবু, শেষ দিনে সেই স্টোকসও ম্যাচের রং ফেরাতে পারেননি।
চারটি টেস্টই পঞ্চম দিনে গিয়েছে— এমন সিরিজ খুব কমই দেখা যায়। ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতের এই ড্র টেস্ট নিঃসন্দেহে লাল বলের ক্রিকেটে এক মহৎ প্রত্যাবর্তনের সাক্ষ্য হয়ে থাকবে।