WTC Final: লর্ডসে ইতিহাসের দোরগোড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা: শিরোপা জয়ের পথে ৬৯ রান দূরে

WTC Final


লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা: শিরোপার খুব কাছেই প্রোটিয়ারা! 

লর্ডসের আকাশে ঝলমলে রোদ, আর সেই রোদ পেরিয়েই উঁকি দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার বহু প্রতীক্ষিত এক স্বপ্ন — বৈশ্বিক শিরোপা। ক্রিকেট দুনিয়ায় যেটি ‘চ্যাম্পিয়ন’ তকমা নামে পরিচিত, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সেটা যেন আরও অনেক বড় কিছু। এক দীর্ঘ ইতিহাসের ভার টেনে টেম্বা বাভুমা ও এইডেন মার্করাম এখন যেন নিয়ে চলেছেন দলকে সেই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে। 

আজ লর্ডসে তৃতীয় দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা স্কোরবোর্ডে তুলেছে ২১৩ রান, মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে। জয়ের জন্য প্রয়োজন আর মাত্র ৬৯ রান। হাতে ৮ উইকেট। এমন অবস্থায় চাপের কথা বলা একটু বাড়াবাড়িই হবে। 

ব্যাটারদের জন্য দারুণ লর্ডসের উইকেট 

লর্ডসের উইকেট তৃতীয় দিনেও ব্যাটিংবান্ধব ছিল। তার স্পষ্ট প্রমাণ অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট জুটির ব্যাটিং। আগের দিন ১৬ রানে অপরাজিত থাকা মিচেল স্টার্ক সঙ্গী পান নাথান লায়নকে, যিনি দ্রুত ফিরে যান রাবাদার বলে। এরপর জশ হ্যাজলউডকে নিয়ে স্টার্ক গড়েন ৫৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি, যা আইসিসির কোনো ফাইনালে শেষ উইকেটে সর্বোচ্চ। 

স্টার্ক খেলেছেন ১৩৬ বল, করেছেন ৫৮ রান। নয় নম্বরে নেমে এটি তাঁর ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি — যা টেস্ট ইতিহাসে নয় কিংবা তার নিচে নামা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথটা কিছুটা কঠিন করেই তুলেছিল। 

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ২০৭ রানে। প্রথম ইনিংসে ৭৪ রানে পিছিয়ে থাকা প্রোটিয়াদের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮২ রানের — ফাইনালের প্রেক্ষাপটে এটি নিঃসন্দেহে বড় লক্ষ্য। 

ইতিহাসে চোখ রেখে এগিয়ে যাচ্ছে প্রোটিয়ারা 

তবে অতীত পরিসংখ্যান দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে কথা বলছে। টেস্টে তারা পাঁচবার ২৫০ রানের বেশি তাড়া করে জিতেছে, তার তিনটিই এসেছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। সবচেয়ে স্মরণীয় সেই ২০০৮ সালের পার্থ টেস্ট, যেখানে ৪১৪ রান তাড়া করে জয় পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এমন রেকর্ড হয়তো এবারও প্রেরণা হয়ে উঠেছে দলের জন্য। 

মার্করাম-বাভুমার দৃঢ়তায় ভর করে 

দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। তৃতীয় ওভারেই আউট হন ওপেনার রায়ান রিকেলটন। তবে এরপর মুল্ডারকে সঙ্গে নিয়ে ৬১ রানের জুটি গড়েন মার্করাম। পরে মুল্ডার আউট হলেও মার্করামের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। 

মাত্র ২ রানে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন বাভুমা, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে স্টিভ স্মিথ সেই ক্যাচ ফেলে দেন। পরে দেখা যায়, সেই ফেলে দেওয়া ক্যাচই হয়তো ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার মুহূর্ত। কারণ এরপর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়েও বাভুমা লড়েছেন সাহসিকতায়, অপরাজিত রয়েছেন ৬৫ রানে। অন্যদিকে মার্করাম তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি, আছেন ১০২ রানে অপরাজিতবাভুমার ক্যাচ ছাড়ার সময় স্মিথ আঙুলে আঘাত পান। সেই চোটের কারণে তাঁকে হয়তো মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে কিছুদিন — যা অস্ট্রেলিয়ার জন্য হতে পারে এক বড় ধাক্কা। 

তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচের চিত্রটা স্পষ্ট— দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে আছে ম্যাচ জেতার মোক্ষম সুযোগ। ৬৯ রানের লক্ষ্য, ৮ উইকেট হাতে, এবং দুই সেট ব্যাটসম্যান ক্রিজে। এখন আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শুধু প্রয়োজন ঠান্ডা মাথায় খেলাটা শেষ করা। যদি তারা সেটি পারে, তবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক শিরোপা উঠতে পারে প্রোটিয়া শিবিরে — একটি স্বপ্ন সত্যি হতে পারে লর্ডসের ঐতিহাসিক মঞ্চে। 

আপনিও কি মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার আজ আর কিছুতেই পিছিয়ে আসা উচিত নয়? মন্তব্যে জানান আপনার মতামত! 

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post