রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও খেলাধুলা: কবিগুরুর শরীরচর্চা ভাবনা
২৫শে বৈশাখ মানেই বিশ্বকবির জন্মদিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বাংলা তথা বিশ্বের বাঙালি সমাজ। তাঁকে আমরা চিনেছি একজন কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতস্রষ্টা ও চিত্রশিল্পী হিসেবে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, রবীন্দ্রনাথ কেবল চিন্তার মানুষ ছিলেন না—তিনি বিশ্বাস করতেন শরীরচর্চা ও খেলাধুলার গুরুত্বেও।
শরীর ও মন—এই যুগল সমন্বয়
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, মন ও শরীর—এই দুইয়ের সুষম বিকাশের মাধ্যমেই একজন মানুষের পূর্ণতা আসে। শান্তিনিকেতনের পাঠভবনে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, ব্যায়াম, দৌড়ানো, জিমনাস্টিক—সবকিছুর উপর গুরুত্ব দেওয়া হত।
তিনি লিখেছেন—
শান্তিনিকেতনে খেলার সংস্কৃতি
বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্রনাথ নিজে খেলাধুলার উপযোগী একটি পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন। সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে ছাত্রদের খেলায় অংশগ্রহণ করতে হত। ফুটবল, ক্রিকেট, দড়ি লাফ, কুস্তি, শরীরচর্চা—সব ছিল পাঠ্যক্রমের অংশ।
‘পাঠভবনের’ প্রতিটি অনুষ্ঠানে খেলাধুলাকে উৎসবের মত করে উদযাপন করা হত। এমনকি বয়স্ক শিক্ষকরাও খেলায় অংশ নিতেন। এর মাধ্যমে গড়ে উঠত শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, ও সৌহার্দ্যের চর্চা।
কবিগুরুর নিজস্ব খেলার অভিজ্ঞতা
ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ নিজে খেলাধুলায় খুব আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে বুঝতে পারেন, শারীরিক সুস্থতা মানসিক স্থিতি আনে। তখন থেকেই তাঁর চিন্তায় আসে শরীরচর্চার গুরুত্ব।
তাঁর পত্রলেখায় পাওয়া যায়—
আজকের প্রাসঙ্গিকতা
আজকের দিনে, যখন শিশু-কিশোররা মোবাইল ও গ্যাজেটের দুনিয়ায় আবদ্ধ, তখন রবীন্দ্রনাথের এই দৃষ্টিভঙ্গি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। শিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলার সুষম সংযোগের বার্তা নতুন প্রজন্মকে সুস্থ, সৃজনশীল ও মানবিক করে তুলতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের শিখিয়েছেন— শিক্ষা মানেই শুধু বইয়ের পাতা নয়, বরং মন ও শরীরের সামগ্রিক উন্নয়ন। তাঁর লেখায় ও জীবনে এই দর্শনই বারবার ফিরে এসেছে। তাই রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কেবল তাঁর কবিতা নয়, তাঁর “খেলার দর্শন”-কেও স্মরণ করাই আজ সময়ের দাবি।
ইন্ডিয়ান স্পোর্টস নিউজ ডেস্ক-এর পক্ষ থেকে বিশ্বকবিকে জন্মদিনে জানাই বিনম্র প্রণাম। যিনি শুধু সাহিত্যের নয়, শিক্ষার, সংস্কৃতির এবং মানবিক বিকাশের এক বিশাল বাতিঘর। তাঁর দর্শন আজও পথ দেখায়— মননের সঙ্গে শরীরচর্চারও প্রয়োজন রয়েছে একটি সুস্থ জাতি গঠনে। ২৫শে বৈশাখে আমরা কুর্নিশ জানাই সেই চিন্তাশীলতার, যেটি আজও সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। শ্রদ্ধার্ঘ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের হৃদয়ে যেমন এক চিরন্তন কবি, তেমনি তিনি ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী ও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষও। তাঁর শিক্ষা-দর্শনে দেহ ও মনের সমান গুরুত্ব ছিল। সেই ভাবনা থেকেই আমরা এই দুই চিত্রের রূপায়ণ কল্পনা করেছি— রবীন্দ্রনাথ নিজেই শান্ত ছায়াময় পরিবেশে হাঁটছেন—একদিকে বিশ্রাম, অন্যদিকে দেহকে সচল রাখার চর্চা। তাঁর সেই ধীর পায়ে হাঁটা যেন এক আধ্যাত্মিক অনুশীলন।এই চিত্রদ্বয় কেবল দৃশ্য নয়, কবির চিন্তাধারার এক শিল্পময় প্রতিফলন।
আরও কবির ভাষায় বলা যায়—