ভারতের হরিয়ানার গুরগাঁওয়ে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হলো সুশান্ত লোক-টু এলাকা। টেনিস তারকা রাধিকা যাদবকে গুলি করে হত্যা করেছেন তাঁরই বাবা, দীপক যাদব। কারণ—প্রতিবেশীদের কটূক্তি। তাদের দাবি ছিল, রাধিকার উপার্জনেই সংসার চলে। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের মেয়েকেই শেষ করে দিলেন দীপক।
২৫ বছর বয়সী রাধিকা যাদব রাজ্য পর্যায়ের একজন স্বীকৃত টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। ডাবলসে আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির পথে ছিলেন তিনি। নিজেই একটি টেনিস একাডেমি পরিচালনা করতেন এবং সমাজের উচ্চপর্যায়ের মানুষদেরও কোচিং দিতেন। তাঁর কোচিংয়ে অনেক উঠতি খেলোয়াড় নিয়মিত অংশ নিত।
তবে দীপক যাদব, বয়স ৫৪, প্রতিবেশীদের কটূক্তি নিয়ে চরম মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তাঁকে প্রায়ই শুনতে হতো, “মেয়ের আয়ে চলে সংসার।” এমন পরিস্থিতিতে দীপক তাঁর মেয়েকে একাধিকবার একাডেমি বন্ধ করার অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু রাধিকা তাতে রাজি হননি।
মনোবিদদের মতে, দীপক দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়ের রিল বানানো ও উপস্থিতি তাঁকে বিব্রত করত। গ্রামের লোকেরা এসব নিয়েও কটূক্তি করত, যা তাঁর রক্ষণশীল মনোভাবকে আঘাত করেছিল।
রাধিকার জন্ম ২৩ মার্চ 2000। তিনি অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের র্যাঙ্কিংয়ে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে সর্বোচ্চ ৭৫ নম্বরে উঠেছিলেন। ডাবলসে ৫৩ এবং সিঙ্গলসে ৩৫ নম্বরে ছিলেন। আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশনের (আইটিএফ) পর্যায়েও তাঁর র্যাঙ্কিং ছিল ১১৩। তবে দুই বছর আগে চোট পাওয়ার পর তিনি প্রতিযোগিতামূলক টেনিস থেকে বিরত হন এবং ইনস্টাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছিলেন।
রাধিকার কোচিংয়ে অংশ নেওয়া ছাত্রছাত্রীরা তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। এক বাসিন্দা বলেন, “রাধিকা বলত তাঁর বাবা-মা রক্ষণশীল, কিন্তু সে ছিল প্রাণবন্ত এবং অসাধারণ খেলোয়াড়।”
স্থানীয় ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পবন যাদব বলেন, “কিছু প্রতিবেশী রাধিকার সাফল্য মেনে নিতে পারেনি। তাঁর রিল নিয়ে অশালীন মন্তব্য করত। শেষমেশ এসব সহ্য করতে না পেরে দীপক এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই ঘটনা যেন আমাদের সমাজে মেয়েদের সাফল্যকে কীভাবে এখনো বাঁকা চোখে দেখা হয়, তারই এক নির্মম উদাহরণ।