শেষ বলে নাটক: রাসেল-রিঙ্কুর দাপটে রাজস্থানকে ১ রানে হারাল কেকেআর

নিশ্বাস আটকে দেওয়া ম্যাচে ১ রানে জয় — ইডেনে কেকেআরের নতুন জাগরণ


রবিবার ইডেন গার্ডেনসে আইপিএলের ইতিহাসে এক অনন্য সন্ধ্যা লেখা হল। এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ বলে রাজস্থান রয়্যালসকে হারিয়ে ১ রানে জয় ছিনিয়ে আনল কলকাতা নাইট রাইডার্স। স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রত্যেক দর্শক, এবং টিভির পর্দায় চোখ রাখা লক্ষ লক্ষ ভক্ত, সকলেই সাক্ষী রইলেন এক নাটকীয়, আবেগঘন ক্রিকেটীয় সন্ধ্যার।

এই ম্যাচ শুধু জয় বা হারের খতিয়ান নয়, এটা এক পুনর্জাগরণের গল্প, একজন আন্দ্রে রাসেলকে ফিরে পাওয়ার গল্প, একজন রিঙ্কু সিংহের লড়াকু মানসিকতার গল্প এবং ক্রিকেট নামক খেলার অনিশ্চয়তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।

ম্যাচের প্রথম ভাগে কলকাতার শুরুটা খুব মন্থর ছিল। যদিও পাওয়ারপ্লে পার করে দল একটু গতি পায়, তবুও প্রত্যাশিত স্কোরের থেকে পিছিয়েই ছিল। এমন সময় নামলেন আন্দ্রে রাসেল। প্রথম ৯ বলে মাত্র ২ রান। তখন অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছেন। রাসেলের ফর্ম, ফিটনেস এবং কেকেআর ম্যানেজমেন্টের ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু এরপরের গল্পই আসল মোড় নেয়।

রাসেল পরের ১৬ বলে করলেন ৫৫ রান। ম্যাচ শেষ করলেন ২৫ বলে ৫৭* রান করে, যার মধ্যে ছিল ৪টি চার ও ৬টি বিশাল ছক্কা। তাঁর স্ট্রাইক রেট দাঁড়ায় ২২৮। মহেশ তিক্ষণের এক ওভারে টানা তিনটি ছক্কা, রিঙ্কুর সঙ্গী হয়ে শেষ ওভারে আক্রমণের ঝড় — সব মিলে নাইটদের ইনিংস দাঁড়িয়ে গেল ২০৬-৪ তে। এটা সম্ভব হয়েছিল রাসেল আর রিঙ্কুর অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের জন্যই।

রাসেল বিরতিতে স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন, "যত বেশি বল পাব, তত বেশি অবদান রাখতে পারব।" কেকেআর টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি তাঁর এই কথাই হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তর।

রিঙ্কু সিংহ আবার প্রমাণ করলেন, কেন তিনি এখন কেকেআরের নির্ভরযোগ্য শেষ মুহূর্তের সেনাপতি। ৬ বলে ১৯ রান। শেষ ওভারে ২২ রান উঠেছে তাঁর ব্যাটেই। শেষ দুই বলে টানা ছক্কায় কেকেআর পৌঁছায় ২০০’র ওপরে। শুধু ব্যাট হাতে নয়, ফিল্ডিংয়েও তাঁর অবদান ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছে। শেষ বলে তাঁর দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউট হলেন জফ্রা আর্চার — আর সেখানেই ফিনিশ!

ম্যাচের পর সৌরভ গাঙ্গুলি মাঠে এসে রাসেলকে অভিনন্দন জানান। দু’জনের মধ্যে এক আন্তরিক মুহূর্ত দেখা যায়, যেখানে সৌরভ রাসেলকে প্রিটোরিয়া ক্যাপিটালস দলে খেলার প্রস্তাব দেন। জানা গিয়েছে, রাসেল ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছেন। এই মুহূর্তে কেকেআরের দল ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে থাকলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি লিগে নেই। ফলে কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই রাসেলকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে সৌরভের দল।

ক্রিকেটে কিছুই পূর্বনির্ধারিত নয় — রবিবার তারই প্রমাণ দিলেন রিয়ান পরাগ। যখন মনে হচ্ছিল ম্যাচ একতরফা হয়ে যাচ্ছে, তখন একাই ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন রাজস্থানকে। মইন আলির ওভারে পরপর ৫টি ছক্কা ও পরবর্তী ওভারে প্রথম বলেই ছক্কা — পরাগ করেন ৪৫ বলে ৯৫ রান। হর্ষিত রানা তখন দলের জন্য হিরো হয়ে উঠেন, যখন হেটমায়ার ও পরাগকে ফিরিয়ে দেন পরপর ওভারেই।

শেষ ওভারে দরকার ছিল ২২ রান। শুভম দুবে তখন নতুন বিপদ। প্রথম তিন বলে একটি চার ও দুটো ছক্কা মেরে প্রায় ম্যাচ বার করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। শেষ বলে দরকার ৩ রান। কিন্তু বৈভব অরোরার নিখুঁত ইয়র্কার আর রিঙ্কু সিংহের অসাধারণ থ্রো — এখানেই ম্যাচের নাটকীয় পরিসমাপ্তি।

এই ম্যাচ শুধু ক্রিকেটের জয় নয়, কেকেআরের আত্মবিশ্বাসের পুনর্জাগরণও বটে। রাসেল, রিঙ্কু, রানা, বৈভব — প্রত্যেকেই নিজের ভূমিকা পালনে অনবদ্য ছিলেন। মাঠে জুহি চাওলার উচ্ছ্বাস, দর্শকদের ঢেউ, ডিজে’র 'করব, লড়ব, জিতব রে' স্লোগানে যেন আবার কেকেআর জেগে উঠেছে। এখন শুধু অপেক্ষা পরবর্তী চারটি ম্যাচের — যেখানে জয় ছাড়া কোনও পথ নেই।

শেষ কথা, এই ম্যাচ হয়তো কেকেআরের মরসুম ঘুরিয়ে দিতে পারে। নিভে আসা প্রদীপ যে আবার আলো দিচ্ছে — তারই প্রমাণ দিল রবিবারের সন্ধ্যা।


কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR) ইনিংস: ২০৬/৪ (২০ ওভার)

আন্দ্রে রাসেল: ৫৭* (২৫ বল, ৪টি চার, ৬টি ছক্কা)
অঙ্কগ্রিশ রঘুবংশী: ৪৪ (৩১ বল)
অজিঙ্কা রাহানে: ৩০ (২৪ বল)
রাহমানুল্লাহ গুরবাজ: ৩৫ (২৫ বল)

বোলিংয়ে উল্লেখযোগ্য:

রিয়ান পরাগ: ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে ১ উইকেট


রাজস্থান রয়্যালস (RR) ইনিংস: ২০৫/৮ (২০ ওভার)

রিয়ান পরাগ: ৯৫ (৪৫ বল, ৭টি চার, ৭টি ছক্কা)
যশস্বী জয়সওয়াল: ৩৪ (২৮ বল)
শুভম দুবে: শেষ ওভারে ২২ রান তোলার চেষ্টায় ১৬ রান করেন

বোলিংয়ে উল্লেখযোগ্য:

    হর্ষিত রানা: ২ উইকেট
    ভৈভব অরোরা: শেষ ওভারে চাপ সামলে ৩ রান রক্ষা করেন

      ম্যাচের সেরা: আন্দ্রে রাসেল

      ব্যাট হাতে ৫৭* রান এবং বোলিংয়ে ১৯তম ওভারে মাত্র ১১ রান দেন, যা ম্যাচের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

       RIYAN PARAG

      রাজস্থান রয়্যালসের রিয়ান পরাগ কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে ৪ মে ২০২৫ তারিখের আইপিএল ম্যাচে টানা ছয়টি বলে ছয়টি ছক্কা হাঁকান — যদিও সবগুলো একই ওভারে ছিল না।

       

      কীভাবে এল এই টানা ছয়টি ছক্কা:

      মঈন আলির করা একটি ওভারে শেষ পাঁচ বলে পাঁচটি ছক্কা মারেন রিয়ান পরাগ।এর পরের ওভারে বরুণ চক্রবর্তীর প্রথম বলটি রিভার্স সুইপ করে আবার ছক্কা মারেন।এভাবে তিনি টানা ছয়টি বলের ওপর ছয়টি ছক্কা মারেন, যা আইপিএল ইতিহাসে এক বিরল রেকর্ড।


      *

      Post a Comment (0)
      Previous Post Next Post