আইপিএলের প্লে-অফের আগে প্রশ্নের মুখে গুজরাট
আইপিএল যেন ধীরে ধীরে শুভমন গিলের গেরো হয়ে উঠছে। ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নাম ঘোষণার আগেই হয়তো মন পড়ে গিয়েছে ইংল্যান্ড সফরে। নইলে কেন টানা দুটি ম্যাচে এমন ছন্দহীনতা? গুজরাট টাইটান্সের শেষ দুই ম্যাচে পরাজয়ের ধরন দেখে প্রশ্ন উঠছে—শুভমনের নেতৃত্বের জোর কতটা? আর তাঁর মন-প্রাণ আদৌ আইপিএলে আছে কি?
লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে গুজরাট হারলেও কিছুটা লড়াই হয়েছিল। কিন্তু চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে তো একপ্রকার আত্মসমর্পণ। ম্যাচের শুরু থেকেই একটা মুহূর্তও মনে হয়নি যে গুজরাট ম্যাচে ফিরতে পারবে। সময় যত এগিয়েছে, গেম থেকে তত হারিয়ে গিয়েছে তারা। চেন্নাইয়ের কাছে ৮৩ রানের হার আইপিএলের ইতিহাসে গুজরাটের সবচেয়ে বড় পরাজয়।
এই হারে প্লে-অফে যাওয়ার সমীকরণ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে গুজরাটের জন্য। প্রথম দুইয়ের মধ্যে শেষ করা এখন আর তাদের হাতে নেই, নির্ভর করছে অন্যান্য দলের পারফরম্যান্সের উপর।
রোহিত শর্মার টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার পর শুভমন গিলকেই উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হচ্ছিল। ভারতের নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকরের সঙ্গে তাঁর বৈঠক এই বার্তাই দিয়েছে। এমনকি আইপিএলের মধ্যেই গিল লাল বলে অনুশীলনও শুরু করেছিলেন। হয়তো সেখানেই গন্ডগোল। সাদা বলের ছন্দ হারিয়েছেন। গত দুটি ম্যাচে তাঁর ব্যাটে রান নেই, সঙ্গী সাই সুদর্শনেরও অবস্থা তথৈবচ। অথচ এ দু’জনই কমলা টুপির দৌড়ে শীর্ষে—সুদর্শন ৬৭৯ ও গিল ৬৪৯ রানে। তাঁদের ব্যর্থতা মানেই গুজরাটের হার।
জস বাটলার, যিনি ৫৩৮ রান করেছেন, তিনিও চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে রান পাননি। গুজরাট যে ন’টা ম্যাচ জিতেছে, তাতে অন্তত একজন টপ অর্ডার ব্যাটার ১৮ ওভার পর্যন্ত টিকে ছিলেন। কিন্তু এখন সেই ভরসা ভেঙে পড়েছে। মিডল অর্ডার চাপে ভেঙে পড়ছে একের পর এক ম্যাচে।
চেন্নাইয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু চিত্র একেবারে আলাদা। আইপিএলে এ বছর তাদের আর কিছু হারানোর নেই—পয়েন্ট টেবিলের একদম নিচে রয়েছে তারা। তবুও ধোনির দল যেন উপভোগ করতে জানে। টস জিতে ধোনি জানিয়ে দিলেন, জিতলে বা হারলে তাঁদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসবে না। তাই খেলাটা উপভোগ করাই লক্ষ্য। সেটাই দেখা গেল মাঠে।
এই ম্যাচেই তারা মরসুমের সবচেয়ে ভালো ব্যাটিং করেছে। ‘জ়েন-ওয়াই’ ব্যাটার আয়ুষ, উর্বিল ও ব্রেভিস মিলিয়ে ৫৯ বলে ১২৮ রান করে ফেলেছেন। তাঁদের স্ট্রাইক রেট ২০০-র ওপরে। সঙ্গে অভিজ্ঞ কনওয়ের ইনিংস মিলিয়ে চেন্নাই তুলেছে মরসুমের সর্বোচ্চ রান। বোঝাই যাচ্ছে, দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে চেন্নাই। তরুণদের সুযোগ দিয়ে আগামী মরসুমের দল তৈরি করে নিচ্ছে তারা।
এই ম্যাচে গুজরাটের ওপেনিং জুটি যদি রান পেত, তাহলে ২০১ রানের লক্ষ্য তাড়া অসম্ভব ছিল না। এই একই মাঠে দিল্লির বিরুদ্ধে তারা ২০১ রান তাড়া করে ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল। কিন্তু এবার একেবারে ভেঙে পড়েছে দল। ফলে শুভমনের নেতৃত্ব, বোলিং রোটেশন, ফিল্ড সেটিং—সব কিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
ধোনির বিপরীতে দাঁড়িয়ে শুভমন যেন ক্লাসে দাঁড়ানো ছাত্র, যাকে মাঠে দাঁড়িয়ে শেখাচ্ছেন গুরু। কীভাবে মরসুম শেষের ম্যাচেও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে দলকে খেলাতে হয়, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন ধোনি। এখন প্রশ্ন একটাই—এই শিক্ষা থেকে কিছু নিতে পারবেন শুভমন? নাকি প্লে-অফে পৌঁছেও হারের যন্ত্রণাই অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য?
