"আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ১০টি সেঞ্চুরি: গেইল ঝড় থেকে সূর্যবংশীর বিস্ফোরণ"

Top 10


আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ১০টি সেঞ্চুরি: গেইল ঝড় থেকে নতুন প্রজন্মের বিস্ফোরণ 

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) হলো এমন এক মঞ্চ, যেখানে কিংবদন্তিরা জন্ম নেয়, বাউন্ডারির রেকর্ড ভেঙে যায়, আর ক্রিকেটের ইতিহাস নতুনভাবে লেখা হয়টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শতরান করা মানেই সাহস, শক্তি আর নিখুঁত স্কিলের মিশ্রণআজকে জেনে নিই আইপিএলের ইতিহাসে করা দ্রুততম ১০টি সেঞ্চুরি সম্পর্কে, যেগুলো ক্রিকেট প্রেমীদের মনে চিরকাল গেঁথে থাকবে 

 

১০. এবি ডি ভিলিয়ার্স – ৪৩ বল 

Ab De


দল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর 
প্রতিপক্ষ: গুজরাট লায়ন্স 
ভেন্যু: ব্যাঙ্গালোর 

সাল: ২০১৬ 

Mr. 360 ডি ভিলিয়ার্সের এই ইনিংস ছিল একদম অন্য লেভেলের। ৪৩ বলে শতরান, সঙ্গে কোহলির সঙ্গে রেকর্ড ২২৯ রানের জুটিএক কথায় বিস্ময়কর! ব্যাট হাতে যেভাবে চারদিক ঘুরিয়ে খেলেন, তাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের হতাশ হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না 

প্রথম ইনিংসরয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর – ২৪৮/৩ (২০ ওভার) 

ম্যাচের শুরুটা ছিল মোটেই ঝড়ো নয়ক্রিস গেইল মাত্ররান করে আউট হয়ে যানকিন্তু এরপর মাঠে নামে এক ব্যাটিং সুনামি! বিরাট কোহলি: ১০৯ (৫৫ বল)। ৫টি চার ও ৮টি ছক্কা, স্ট্রাইক রেট: ১৯৮.১৮। দুর্দান্ত লিডারশিপ ইনিংস, গ্লোরিয়াস কাভার ড্রাইভ, ফ্লিকহুকে ছিল ছন্দের সুরএবি ডি ভিলিয়ার্স: ১২৯* (৫২ বল), ১০টি চার ও ১২টি ছক্কা,স্ট্রাইক রেট: ২৪৮.০৭। ‘Mr. 360’ যেন আজ সত্যিকারের ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে চার-ছক্কার তাণ্ডব চালালেনলং অন, স্কয়ার লেগ, থার্ডম্যানসবখানেই শট! তাঁর ইনিংসেই মূলত ম্যাচ একপাক্ষিক হয়ে যায়। ২২৯ রানের জুটি (৯৬ বলে), IPL ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটিগুলোর একটি 

দ্বিতীয় ইনিংসগুজরাট লায়ন্স – ১০৪ অলআউট (১৮.৪ ওভারে) 

২৪৯ রানের পাহাড়ের সামনে গুজরাট একেবারে ভেঙে পড়েকেউই দাঁড়াতে পারেননি। ডোয়েইন ব্রাভো (১), ম্যাককালাম (১১), কার্তিক (২) – একে একে সব ভেঙে পড়েনশুরুরউইকেট পড়ে মাত্র ৪৭ রানে! 

রেকর্ডস এই ম্যাচে: 

সবচেয়ে বড় জয়ের ব্যবধান (১৪৪ রান) 
কোহলিডি ভিলিয়ার্স দুইজনের শতরান – IPL ইতিহাসে বিরল 

এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড 

এটি ছিল একটি ম্যাচ যেখানে RCB শুধু জেতেনি, বিধ্বস্ত করে দিয়েছেব্যাটিং যেমন আগুন, তেমনি বোলিংও নিখুঁতআইপিএলের শ্রেষ্ঠ ম্যাচগুলোর একটি 

৯. অ্যাডাম গিলক্রিস্ট – ৪২ বল 

Adam Gili


দল: ডেকান চার্জার্স 
প্রতিপক্ষ: মুম্বাই ইন্ডিয়ানস 
ভেন্যু: মুম্বাই 

সাল: ২০০৮ 

আইপিএলের প্রথম মৌসুমে গিলক্রিস্ট ৪২ বলে শতরান করে ম্যাচ একাই শেষ করে দেনতাঁর ইনিংস ছিল ঝড়ো, গতিশীল এবং চ্যাম্পিয়ন মানসিকতার পরিচয় 

প্রথম ইনিংসমুম্বাই ইন্ডিয়ান্স – ১৫৪/৭ (২০ ওভার) 

মুম্বাই ভালো শুরু করতে পারেনিএকের পর এক উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল শুরুর দিকেই। লুক রনকি – ১৩ (১১ বল), জয়াসুরিয়া – ১৮ (২১ বল), একেবারে মন্থর ইনিংসরাহানে – ০ (৭ বল), হতাশাজনকরবিন উথাপ্পা – ৬ (৫ বল), অধিনায়ক পোলক – ৩১ (৩১ বল), ইনিংস গুছিয়েছিলেনঅভিষেক নায়ার – ৩৪ (১৯ বল), দ্রুত রান তুলেছিলেনডোয়াইন ব্রাভো – ৩৪ (১৮ বল), কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা শেষ দিকে কিছুটা লড়াকু স্কোর তুললেও, মোট রান ১৫৪/৭, যা আধুনিক টি২০ ক্রিকেটে গড়পড়তা 

 দ্বিতীয় ইনিংসডেকান চার্জার্স – ১৫৫/০ (১২ ওভার) 

এখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায় পুরোপুরিঅ্যাডাম গিলক্রিস্ট নামলেন এবং শুরু থেকেই গর্জে উঠলেন ব্যাট হাতেএক কথায়, এটা ছিল গিলক্রিস্ট শো! অ্যাডাম গিলক্রিস্ট – ১০৯* (৪৭ বল) ৯টি চার ও ১০টি ছক্কাস্ট্রাইক রেট: ২৩১.৯১। পিচে নেমে আক্ষরিক অর্থে বোলারদের গুঁড়িয়ে দিলেন! কোনো বোলারই তাঁকে আটকে রাখতে পারেনি 

রেকর্ডসতথ্য: 

১২ ওভারে রান তাড়া করা – IPL ইতিহাসে অন্যতম দ্রুততম জয়! 
১০ উইকেটের জয় – একতরফাবড় ব্যবধানে জয় 

গিলক্রিস্টের ইনিংসসেই মৌসুমে দেখা অন্যতম বিধ্বংসী ইনিংস 

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট – ১০৯* (৪৭ বল), একক দাপটে জয় এনে দেন। গিলক্রিস্ট শুধুমাত্র পাওয়ার হিটার নন, তিনি গেম চেঞ্জার। টি২০ ক্রিকেটে টপ অর্ডারে এক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান পুরো ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেমুম্বাইয়ের বোলিং ইউনিট এই ম্যাচে ছিল পুরোপুরি অসহায়এটি ছিল সেই রকম এক ম্যাচ যা আইপিএলের প্রথম দিকের ম্যাচ হয়েও আজও ভক্তদের মনে গেঁথে আছে গিলক্রিস্টের জন্য 

৮. উইল জ্যাকস – ৪১ বল 

Will


দল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর 
প্রতিপক্ষ: গুজরাট টাইটানস 
ভেন্যু: আহমেদাবাদ 
সাল: ২০২৪ 

উইল জ্যাকস – ১০০* (৪১ বল), ৫ চার, ১০ ছয় 
বিস্ফোরক ইনিংসে একক হাতে ম্যাচ শেষ করে দেওয়া এক অনন্য কীর্তি! এই ম্যাচটি ব্যাটিং-দ্যুতিতে ভরপুর ছিলদুই দলই অসাধারণ খেললেও উইল জ্যাকসের সেই ঝড়ে গুজরাটকে হার মানতে হলো 

 প্রথম ইনিংস: গুজরাট টাইটানস – ২০০/৩ (২০ ওভার) 

টস জিতে ব্যাট করতে নামা গুজরাট টাইটানস ইনিংসের শুরুটা ভালো হয়নি উইকেটকিপার ব্যাটার ঋদ্ধিমান সাহা ৪ বলে মাত্ররান করে সাজঘরে ফেরেন শুভমান গিল অধিনায়ক হিসেবে ধীরগতির ইনিংস খেলেন (১৬ বলে ১৯), যা পাওয়ারপ্লে-তে দলের গতিতে প্রভাব ফেলে এরপর খেলায় ফিরিয়ে আনেন সাই সুদর্শন (৮৪ রান, ৪৯ বল) ও শাহরুখ খান (৫৮ রান, ৩০ বল) দুজনেই জ্বলে ওঠেন মাঝের ওভারে এবং গড়ে তোলেন ১০০+ রানের পার্টনারশিপ শেষদিকে ডেভিড মিলার (২৬ রান, ১৯ বল) রান গতি ধরে রেখে ইনিংসটি ২০০-তে নিয়ে যান 

দ্বিতীয় ইনিংস: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর – ২০৬/১ (১৬.০ ওভার) 

রান তাড়া করার নিখুঁত প্রদর্শনী! 

ফাফ ডু প্লেসিস (২৪ রান, ১২ বল) ও বিরাট কোহলি (৭০ রান, ৪৪ বল) রানের গতির সূচনা করেন 
ডু প্লেসিস দ্রুত ৩টি ছক্কা হাঁকিয়ে আক্রমণের ঝলক দেখান, তবে সৌরভ কিশোরের বলে বিদায় নেন এরপর আসে দিনের মূল চমকউইল জ্যাকস তিনি একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন মাত্র ৪১ বলে শতরান করে! জ্যাকসের ইনিংসে ছিল ৫টি চার এবং ১০টি বিশাল ছক্কাগুজরাটের বোলারদের তিনি একরকম বিধ্বস্ত করে দেন 

৭. অভিষেক শর্মা – ৪০ বল 

Avishek


দল: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ 
প্রতিপক্ষ: পাঞ্জাব কিংস 
ভেন্যু: হায়দরাবাদ 

সাল: ২০২৫ 

আভিষেক শর্মা – ১৪১ (৫৫ বল), ১৪ চার, ১০ ছয়একক দানবীয় ইনিংসেই ম্যাচ জিতে নেনএই ম্যাচটি আইপিএলের ইতিহাসে অন্যতম হাই-স্কোরিংদর্শকনন্দিত ম্যাচ হয়ে থাকবে, যেখানে ব্যাটিং-বিশ্ব যেন চোখের সামনে নতুন করে সংজ্ঞায়িত হলো।  

 প্রথম ইনিংস: পাঞ্জাব কিংস – ২৪৫/৬ (২০ ওভার) 

পাঞ্জাব কিংস টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখায়। প্রিয়াংশ আর্য মাত্র ১৩ বলে ৩৬ রান করে ঝড়ো সূচনা এনে দেনতার ইনিংসে ছিল ২টি চারের সাথে ৪টি বিশাল ছক্কা 

এরপর প্রভসিমরন সিংহ (৪২ রান, ২৩ বল) ও অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার (৮২ রান, ৩৬ বল) ম্যাচের গতিপথকে একেবারে অন্য মাত্রায় নিয়ে যানশ্রেয়াস আইয়ারের ইনিংসটি ছিল একেবারে ক্লাসিক পাওয়ার-হিটিং—৬টি চার ও ৬টি ছক্কায় সাজানোশেষদিকেস্টইনিস (৩৪ রান, ১১ বল) আগুনে এক ক্যামিও ইনিংস খেলে দলকে নিয়ে যান ২৪৫ রানের 

 দ্বিতীয় ইনিংস: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ – ২৪৭/২ (১৮.৩ ওভারে জয়) 

এই রানের পাহাড়ও যথেষ্ট নয়, যদি সামনে থাকে আভিষেক শর্মা মতো ব্যাটার! হায়দরাবাদের রান তাড়ার শুরুতেই ট্রাভিস হেড (৬৬ রান, ৩৭ বল) ও আভিষেক শর্মা (১৪১ রান, ৫৫ বল) এক দুর্ধর্ষ ওপেনিং জুটি গড়েনবিশেষ করে আভিষেকের ইনিংসটি ছিল বিধ্বংসী—১৪টি চার ও ১০টি ছক্কার মাধ্যমে তিনি গড়েন চলতি আসরের সবচেয়ে দ্রুততম ১৪০+ রানের ইনিংসপাঞ্জাব কিংসের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়ে, হায়দরাবাদ ১৮.৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় 

৬. প্রিয়াংশ আর্য – ৩৯ বল 

Arya


দল: পাঞ্জাব কিংস 
প্রতিপক্ষ: চেন্নাই সুপার কিংস 
ভেন্যু: মুল্লানপুর 

সাল: ২০২৫ 

আরও এক তরুণ বিস্ফোরক ব্যাটার প্রিয়াংশ আর্য ঝড় তোলেন চেন্নাইয়ের বিপক্ষেমাত্র ৩৯ বলে শতরান করে আইপিএলের ইতিহাসে নিজের জায়গা করে নেনরিভার্স সুইপ, লফটেড ড্রাইভ, হুকসব ধরনের শটে ছিল আত্মবিশ্বাসশৈল্পিক দক্ষতার মিশেলতাঁর ইনিংসে ছিল ৭টি চার ও ৯টি ছয়, স্ট্রাইক রেট২৪৫.২ 

এই ইনিংসটি শুধু রানসংখ্যার কারণে নয়, তার শট নির্বাচন, সাহসিকতা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার ক্ষমতার জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকবেচেন্নাইয়ের বিপক্ষে প্রথম থেকেই ধাক্কা খেতে থাকে পাঞ্জাব কিংস।প্রিয়াংশ আর্যর  সাথে ওপেন করতে নামা প্রভসিমরন সিংহ ফিরেন শূন্য রানে, এরপর একে একে ব্যর্থ হন স্টইনিস (৪), শ্রেয়াস আইয়ার (৯), নেহাল ওয়াধেরা (৯), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১)মাত্র ৭.২ ওভারে ৪৩ রানে পড়ে যায় উইকেটজয়ের আশা তখন অনেকটাই ফিকে 

এমন চাপের মুহূর্তে হাল ধরেন এক তরুণপ্রিয়াংশ আর্যআর পাঁচ জনের মতন ধ্বসে না পড়ে তিনি একাই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যানশুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব, কিন্তু তাতে ছিল না কোনো হঠকারিতারিভার্স সুইপ, কভার ড্রাইভ, পুলপ্রতিটি শটেই ছিল আত্মবিশ্বাসনিয়ন্ত্রণ মাত্র ৩৯ বলে শতরান পূর্ণ করেন প্রিয়াংশএমন এক ইনিংস যা শুধু স্কোরবোর্ড সাজায় না, দলের আত্মবিশ্বাসও ফিরিয়ে আনেযখন ব্যাটিং অর্ডারের সবাই একে একে ব্যর্থ হচ্ছেন, তখন প্রিয়াংশ একাই দলের মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়ান পরবর্তীতে শশাঙ্ক সিং (৫২*) ও মার্কো ইয়ানসেন (৩৪*) তাঁর সঙ্গ দেন, এবং দল শেষ পর্যন্ত দাঁড় করায় ২১৯ রানের লড়াকু স্কোর 

৫. ট্রাভিস হেড – ৩৯ বল 

Head


দল: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ 
প্রতিপক্ষ: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর 
ভেন্যু: ব্যাঙ্গালোর 

সাল: ২০২৪ 

অস্ট্রেলিয়ার এই মারকুটে ব্যাটার ৩৯ বলে শতরান করে ব্যাঙ্গালোরের বোলিং লাইনআপ ধ্বংস করে দেনলাইন-লেংথ ভুল করলেই তা গ্যালারিতে পাঠান, এমন নির্ভীক ইনিংস আজীবন মনে রাখার মতো 

প্রথম ইনিংস: সানরাইজার্স হায়দরাবাদ – ২৮৭/৩ (২০ ওভার) 

টস জিতে ব্যাট করতে নামা হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যানরা এককথায় বিধ্বংসী রূপে দেখা দেন। ট্রাভিস হেড খেলেন এক ঐতিহাসিক ইনিংস — ৪১ বলে ১০২ রান! তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৯টি চার ও ৮টি ছক্কা, স্ট্রাইক রেট ২৪৮.৮! তাঁকে দুর্দান্তভাবে সঙ্গ দেন হেনরিক ক্লাসেন (৩১ বলে ৬৭ রান, ৭টি ছক্কা)।শেষে ঝড় তুলে দেন আব্দুল সামাদ, মাত্র ১০ বলে ৩৭ রান করে হায়দরাবাদকে পৌঁছে দেন ২৮৭ রানে!আয়ডেন মার্করাম দ্রুত ৩২ রান করে দারুণ ফিনিশে অবদান রাখেনএই ইনিংসটি ছিল আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের নিখুঁত উদাহরণবলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যাঙ্গালোর বোলাররা ছিলেন দিশেহারা! 

 দ্বিতীয় ইনিংস: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর – ২৬২/৭ (২০ ওভার) 

ব্যাট হাতে হার মানতে নারাজ ব্যাঙ্গালোরবিশাল লক্ষ্যের পেছনে ছুটেও তারা হাল ছাড়েনি। ফাফ ডু প্লেসিস ২৮ বলে ৬২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন, ৭ চার ও ৪ ছক্কা মারেন। বিরাট কোহলি ব্যাটও ছিল জ্বলে ওঠা—২০ বলে ৪২ রানকিন্তু মিডল অর্ডারে হোঁচট খেয়ে কিছুটা গতি থেমে যায়উইল জ্যাকস (৭), প্যাটিদার (৯), সৌরভ চৌহান (০) দ্রুত ফিরে যানএরপর ম্যাচ জমিয়ে তোলেন দিনেশ কার্তিকতিনি খেলেন এক অতিমানবীয় ইনিংস—৩৫ বলে ৮৩ রান (৫ চার, ৭ ছক্কা)। অনুজ রাওয়াত ১৪ বলে ২৫ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন, যদিও সময় শেষ হয়ে যায় 

হায়দরাবাদের ব্যাটিং ঝড়ে ব্যাঙ্গালোরকে রানের পাহাড়ে চাপা দেওয়া ম্যাচ মোট রান: ৫৪৯ রান (আইপিএল ইতিহাসে অন্যতম সর্বোচ্চ) 

৪. ডেভিড মিলার – ৩৮ বল 

David


দল: কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব 
প্রতিপক্ষ: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর 
ভেন্যু: মোহালি 

সাল: ২০১৩ 

"If it’s in the arc, it’s out of the park." – এই উক্তিকে বাস্তবে রূপ দেন মিলার। ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে তিনি ৩৮ বলে শতরান করেন এবং ১০১* রানে অপরাজিত থেকে নিজের দলকে দুর্দান্ত জয় এনে দেন। আইপিএলের এক অবিশ্বাস্য ম্যাচ তুলে ধরা হলো, যেখানে ডেভিড মিলার খেলেন অলটাইম ক্লাসিক ইনিংস এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব এক রোমাঞ্চকর জয় ছিনিয়ে নেয়: 

প্রথম ইনিংস: RCB – ১৯০/৩ (২০ ওভার) 

চেতেশ্বর পূজারা ও ক্রিস গেইল মিলে গড়েন দারুণ সূচনা, যার ভিত্তিতে রানের পাহাড় তৈরি করেছিল ব্যাঙ্গালোর 

ব্যাটিং বিশ্লেষণ: 

চেতেশ্বর পূজারা – ৫১ (৪৮ বল), স্থির ইনিংস খেলেন 
ক্রিস গেইল – ৬১ (৩৩ বল), ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং 
ভিরাট কোহলি – ১৪ (১৪ বল), মাঝামাঝি 
এবি ডি ভিলিয়ার্স – ৩৮* (১৯ বল), ইনিংসের গতি বাড়ান 

হেনরিকস – ১৬* (৭ বল), শেষের দিকে দ্রুত রান 

স্কোরবোর্ডে তুলে নেন ১৯০/৩ – একটি প্রতিযোগিতামূলক টার্গেট 

দ্বিতীয় ইনিংস: কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব – ১৯৪/৪ (১৮ ওভার) 

এটা ছিল ডেভিড মিলারের ব্যক্তিগত প্রদর্শনী – একাই ম্যাচ নিয়ে গেলেন অন্য মাত্রায় 

শুরুটা ভালো ছিল না: 

মানদীপ সিং – ১৬ (১২ বল) 
শন মার্শ – ৬ (৭ বল) 
গুরকিরাত – ২০ (২০ বল) 

ডেভিড হুসি – ১৩ (১৪ বল) 

৫১/৪ – মনে হচ্ছিল ম্যাচ বেরিয়ে যাবে! 

 কিন্তু তারপর নামলেন – ডেভিড মিলার! 

ডেভিড মিলার – ১০১* (৩৮ বল) 

৮টি চার ও ৭টি বিশাল ছক্কা 
স্ট্রাইক রেট – ২৬৫.৭৮ 

৫১/৪ থেকে দলকে জয় এনে দিলেন ১৮ ওভারেই 

মিলারের ইনিংস টি২০ ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ইনিংস হিসেবে আজও স্মরণীয়। "ডেভিড মিলার দ্য কিলার" ম্যাচ

৩. ইউসুফ পাঠান – ৩৭ বল 

Yousuf


দল: রাজস্থান রয়্যালস 
প্রতিপক্ষ: মুম্বাই ইন্ডিয়ানস 
ভেন্যু: ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়াম, মুম্বাই 

সাল: ২০১০ 

২১৩ রান তাড়া করতে নেমে ৪০/৩ অবস্থায় মাঠে নামেন ইউসুফতারপর শুরু হয় তাণ্ডব৩৭ বলে শতরান করে তিনি রাজস্থানের জয়ের স্বপ্ন ফের বাঁচিয়ে তোলেনযদিও ম্যাচ শেষে রাজস্থান হেরে যায়, তবে এই ইনিংস ক্রিকেট প্রেমীদের মন জয় করে নেয়।  

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স – ২১২/৬ (২০ ওভার) 

দ্রুতগতির একটি ইনিংসে মুম্বাইয়ের ব্যাটাররা শুরু থেকেই আগ্রাসী মনোভাব দেখায় 

ব্যাটিং বিশ্লেষণ: 

সনজয়সুরিয়া – ২৩ (১৪), ঝড়ো শুরু 
শচীন টেন্ডুলকর (অধিনায়ক) – ১৭ (১১), দ্রুত কিছু বাউন্ডারি 
আদিত্য তারে – ২৩ (১৩), কার্যকর ওপেনিং জুটি 
সৌরভ তিওয়ারি – ৫৩ (৩৩), দারুণ ছন্দে 
অম্বাতি রায়ডু – ৫৫ (৩৩), ইনিংসের সেরা অবদান 
রাজগোপাল সতীশ – ৬ (৫), রানআউট 
হারভজন সিং – অবসর আহত (৮ রান) 

রায়ান ম্যাকলারেন – ১১* (৫), শেষের ঝড় 

এক্সট্রা: ১৬ রান (ওয়াইড ১৩), রানরেট: ১০.৬০,মো স্কো212/6 

 

রাজস্থান রয়্যালস – ২০৮/৭ (২০ ওভার) 

মাত্র রানের ব্যবধানে হেরে যায় রাজস্থান, যদিও ইউসুফ পাঠান খেলেন এক ঐতিহাসিক ইনিংস 

ব্যাটিং বিশ্লেষণ: 

গ্রায়েম স্মিথ – ২৬ (২২), ভালো শুরু 
স্বপনিল আসনোদকর – রানআউট (০), প্রথম বলেই আউট 
নামান ওঝা – ১২ (১২), মিডল-অর্ডার ফ্লপ 
অভিষেক ঝুঞ্জনওয়ালা – ১৪ (১১), দ্রুত হারানো উইকেট 
ইউসুফ পাঠান – ১০০ (৩৭), ৯টি চার, ৮টি ছক্কা, স্ট্রাইক রেট: ২৭০.২৭ মাত্র ৩৭ বলে শতরান – সেই সময়ের আইপিএল-এ দ্রুততম সেঞ্চুরি 
পরাস ডোগরা – ৪১ (২৯), ভালো সাপোর্ট 
ডিমিত্রি মাস্কারেনহাস – ৯* (৭), শেষ চেষ্টা 
অমিত উনিয়াল – ০ (১) 

শেন ওয়ার্ন – ১* (১) 

এক্সট্রা: ৫ রান (ওয়াইড ৫) 
শেষ ২ ওভার দরকা ছিল ২৪ রা, কিন্ত পাঠা আউ হয় গেল ছন্ হারাল। 

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটিং ঝড়, অন্যদিকে ইউসুফ পাঠানের বিধ্বংসী শতরান, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় অধরাই থেকে যায় রাজস্থান রয়্যালসের জন্য 

২. বৈভব সূর্যবংশী – ৩৫ বল 

Baivab


দল: রাজস্থান রয়্যালস 
প্রতিপক্ষ: গুজরাট টাইটানস 
ভেন্যু: জয়পুর 

সাল: ২০২৫ 

মাত্র ১৪ বছর বয়সে শতরান! বৈভব সূর্যবংশী এক অনন্য কীর্তি গড়ে ৩৫ বলে শতরান করে আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যানসাহসিকতা, স্টাইল এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর এই ইনিংস নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা 

গুজরাট টাইটানসের ইনিংস: ২০৯/৪ (২০ ওভার) 

শুভমান গিল (অধিনায়ক) ছিলেন দলের স্তম্ভ, ৫০ বলে ৮৪ রান করেন (৫ চার, ৪ ছয়)। জস বাটলার দেখালেন কেন তিনি বিশ্বমানের ব্যাটার—২৬ বলে ৫০ রান (৩ চার, ৪ ছয়)। সাই সুদর্শন ৩০ বলে ৩৯ রান করেন (৪ চার, ১ ছয়)। ওয়াশিংটন সুন্দর ৮ বলে ১৩ রান করেন, আর রাহুল তেওটিয়া ৪ বলেরান করেন। শাহরুখ খান ছিলেন অপরাজিত, ২ বলেরান 

রাজস্থান রয়্যালসের জবাব: ২১২/২ (১৫.৫ ওভার) 

বৈভব সূর্যবংশী ইনিংসের আসল নায়ক। ৩৮ বলে ১০১ রান মারেন ৭টি চার ও ১১টি ছয় আউট হন ১১.৫ ওভারে প্রসিধ কৃষ্ণার বলেতখন স্কোর ছিল ১৬৬/১। যশস্বী জয়সওয়াল অপরাজিত থেকে যান, ৪০ বলে ৭০ রান (৯ চার, ২ ছয়)। নিতীশ রানা ২ বলেরান করেন, এলবিডব্লিউ হন রশিদ খানের বলে। অধিনায়ক রিয়ান পরাগ ১৫ বলে ৩২ রান (২ চার, ২ ছয়), অপরাজিত থাকেনরাজস্থান রয়্যালস ১৫.৫ ওভারে ২১২/২ করে ৭ উইকেটে জয় পায় 



১. ক্রিস গেইল – ৩০ বল 

gayle


দল: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর 
প্রতিপক্ষ: পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া 
ভেন্যু: এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, ব্যাঙ্গালোর 

সাল: ২০১৩ 


এই তালিকায় প্রথম নামটা একেবারে প্রত্যাশিতইউনিভার্স বস! গেইল মাত্র ৩০ বলে শতরান করে রেকর্ড গড়েন এবং ১৭৫* রানে অপরাজিত থেকে আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত ইনিংস খেলে ফেলেন। ১৭টি ছয় ও ১৩টি চার মেরে গেইল শুধু ম্যাচটা জেতাননি, আইপিএলের ইতিহাসই বদলে দেন 

২৩ এপ্রিল, ২০১৩ – আইপিএলের ইতিহাসে এমন একটা দিন, যেটা কোনো ক্রিকেটপ্রেমী ভুলতে পারে নাবেঙ্গালুরুর এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যা ঘটেছিল, তা যেন ক্রিস গেইল নামক ঝড়ের এক মহাপ্রলয়! বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও সত্যি – RCB মাত্র ২০ ওভারেই তুলেছিল ২৬৩ রান! আর এর মূলে ছিলেন একাই এক মহাবিস্ফোরক নাম – ক্রিস গেইল 

 

Royal Challengers Bangalore – 263/5 (20 ওভার) 

Pune Warriors India – 133/9 (20 ওভার) 

 

ক্রিস গেইলের সেই বিস্ফোরণের পরে, Pune Warriors জানত তারা আগুন পাহাড়ে উঠছেশেষ পর্যন্ত তারা ২০ ওভারে মাত্র ১৩৩ রান তুলতে সক্ষম হয়, যা গেইলের একার স্কোরেরও ৪২ রান কম! 

ক্রিস গেইলের ইনিংস: রেকর্ডের খনি! 

✅ ১৭৫ রান – T20 ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর (সেই সময়, এখনো অন্যতম) 
মাত্র ৬৬ বলে 
✅ ১৩ চার ও ১৭টি বিশাল ছক্কা 
মাত্র ৩০ বলে সেঞ্চুরি – T20-এ দ্রুততম শতরান 

বল হাতেওউইকেট নিয়ে সেরা অলরাউন্ড শো!

এককথায় – "GayleStorm" যেন বাস্তবেই ধেয়ে এসেছিল পুনে ওয়ারিয়র্সের উপর! 

Top 10 Century

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post