১৪ বছর বয়সী বৈভব সূর্যবংশী আইপিএল এ রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি করে চমকে দিলেন সবাইকে
ভারতীয় ক্রিকেট এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলো, যখন মাত্র ১৪ বছর বয়সী বৈভব সূর্যবংশী আইপিএলের মঞ্চে ঝড় তুললেন। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে খেলতে নেমে বিহারের এই কিশোর গুজরাট টাইটান্সের বোলিং আক্রমণকে বিধ্বস্ত করে মাত্র ৩৫ বলে সেঞ্চুরি হাঁকালেন, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন রেকর্ড গড়ল।
তিনি শুধুমাত্র আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করা খেলোয়াড়ই নন, বরং বিশ্ব ক্রিকেটে এত কম বয়সে টি-টোয়েন্টি শতরান করার কৃতিত্ব আর কারও নেই।
ম্যাচ হাইলাইটস: রাজস্থান রয়্যালস বনাম গুজরাট টাইটান্স
গুজরাট টাইটান্স ইনিংস:
- ২০ ওভারে ২০৯/৪
- শুভমান গিল – ৭৬ (৪৯ বল)
- ডেভিড মিলার – ৫৪* (২৯ বল)
রাজস্থান রয়্যালস ইনিংস:
- ১৫.৫ ওভারে ২১২/২
- বৈভব সূর্যবংশী – ১০১ (৩৮ বল, ৭টি চার, ১১টি ছক্কা)
- যশস্বী জয়সওয়াল – ৭০ (৪০ বল)
ফলাফল: রাজস্থান রয়্যালস ৮ উইকেটে জিতল, হাতে রইল ২৫ বল।
বৈভবের ইনিংস থেকে কিছু উল্লেখযোগ্য রেকর্ড ও মুহূর্ত
আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে শতরান
কোনো টিনএজারের করা সবচেয়ে দ্রুততম আইপিএল ফিফটি – ১৭ বলে
স্ট্রাইক রেট – ২৬৫.৭৮
মোট রান – ৩৮ বলে ১০১
বাউন্ডারি – ৭টি চার, ১১টি ছক্কা
সাফল্যের পেছনের গল্প
বৈভব বিহারের সমষ্টিপুর জেলার তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা সঞ্জীব একজন কৃষক, যিনি ছেলের স্বপ্নপূরণে জমি বিক্রি করতেও পিছপা হননি। মাত্র ৪ বছর বয়সে বৈভব ক্রিকেট শেখা শুরু করে, আর ৭.৫ বছর বয়সে পাটনার একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন কোচ সৌরভ কুমারের অধীনে, যিনি তাঁর প্রতিভা সঙ্গে সঙ্গেই চিনে ফেলেন।
প্রতিদিন ১০০ কিমির বেশি পথ অতিক্রম করে কোচ মণীশ ওঝার অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে যেত বৈভব। এক একটি সেশনে সে ৫০০টির বেশি বল খেলা অভ্যাস করত। অনেক বিশ্লেষক যখন তাঁর আইপিএল নিলামে সুযোগ পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, রাজস্থান রয়্যালস তাঁকে ₹১.১০ কোটি টাকায় দলে নেয়। কিন্তু দলের মেন্টর রাহুল দ্রাবিড় বুঝেছিলেন তাঁর অসাধারণ সম্ভাবনা — আর বৈভব প্রমাণ করল, তিনি ঠিকই দেখেছিলেন।
শুধু এক ম্যাচের বিস্ময় নয়
বৈভবের প্রতিভা আকস্মিক নয়। তিনি আগেই অনূর্ধ্ব-১৯ ‘বি’ দলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন, ভিনু মানকড় ট্রফিতে করেছেন ৪০০-র বেশি রান। এমনকি অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে একটি অনানুষ্ঠানিক টেস্টে ৫৮ বলে শতরান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন — যা এই স্তরে কোনো ভারতীয়র সবচেয়ে দ্রুত সেঞ্চুরি।
বৈভব সূর্যবংশীর এই স্বপ্নের ইনিংস শুধুই পরিসংখ্যান নয় — এটি একটি লড়াইয়ের গল্প, আত্মত্যাগের গল্প, আর অটল বিশ্বাসের গল্প। বিহারের ধুলোয় ভরা মাঠ থেকে শুরু করে রশিদ খান ও ইশান্ত শর্মার মতো আন্তর্জাতিক তারকাদের বিরুদ্ধে দাপট দেখানো — ১৪ বছর বয়সী এই ছেলেটি নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেছে ক্রিকেটের ইতিহাসে। তাঁর নির্ভীক মানসিকতা ও প্রাকৃতিক প্রতিভা বলছে — ভারত পেয়েছে তার পরবর্তী ক্রিকেট সুপারস্টার।